Wednesday, July 2, 2025
MD FORHAD REZA
  • Home
  • Travel
    • Destination
    • Travel Ideas
  • Blogs
  • Story
  • Poem
  • Gallery
    • Photo
    • Video
No Result
View All Result
MD FORHAD REZA
  • Home
  • Travel
    • Destination
    • Travel Ideas
  • Blogs
  • Story
  • Poem
  • Gallery
    • Photo
    • Video
No Result
View All Result
Plugin Install : Cart Icon need WooCommerce plugin to be installed.
MD FORHAD REZA
No Result
View All Result

২০২৩ সালে কেমন হতে যাচ্ছে তুরস্কের ভবিষ্যত ?

MD FORHAD REZA by MD FORHAD REZA
November 25, 2024
in Blogs
0 0
0
Home Blogs
২০২৩ সালে কেমন হতে যাচ্ছে তুরস্কের ভবিষ্যত ?

ইউরোপ ও এশিয়ার মিলনকারী দেশ তুরস্ক। হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে তুরস্ক বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত একটি দেশ। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেফ এরদোগান। এই শাসনামলে তুরস্কের রাজনৈতিক, সামরিক, কূটনীতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিভিন্ন ভূমিকা ও সিদ্ধান্তের কারণে বর্তমান মুসলিম বিশ্বে একদিকে যেমন তুমুল জনপ্রিয়, অন্যদিকে গোটা পশ্চিমা বিশ্বের নিকট চরম সমালোচিত।

প্রায় ৭০০ বছর ধরে উসমানীয় খেলাফত বা অটোমান শাসনের কেন্দ্রভূমি ছিলো তুরস্ক। ইস্তাম্বুল শহরে বসে ইউরোপ, উত্তর অফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশাল এলাকা শাসন করতেন অটোমান সুলতানগণ। খলিফা হিসেবে অটোমান সুলতানরা সারা মুসলিম বিশ্বে বিপুল সম্মান কুড়িছেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সম্রাজের পরাজয়ের পর ১৯২৪ সালে অনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটে। জন্ম হয় সেকুলারিজম তত্ত্বের বিশ্বাসী আধুনিক তুরস্কের। ফলশ্রুতিতে, রাতারাতি মুসলিম বিশ্বে উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হারায় তুরস্ক। আধুনিক তুরস্কের গঠন, অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ও তুরস্ককে শতবৎসরের জন্য পরাশক্তি হতে না দেওয়ার জন্য সম্পাদিত হয় ঐতিহাসিক লুজান চুক্তি।

১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে স্বাক্ষরিত হয় ১ম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তকারী লুজান চুক্তি। অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি তুরস্কের প্রতিনিধি এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, গ্রিস, রোমানিয়া, যুগোস্লাভিয়া ও ইতালির প্রতিনিধিদের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। লুজান চুক্তি অনুসারে একদিকে যেমন অটোমান সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে উঠে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি তুরস্কের উপর আরোপ করা হয় বেশকিছু বিধিনিষেধ। শতবর্ষের এ চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ককে আগামী একশো বছরের জন্য তাদের সামনে মাথা তুলে যাতে দাঁড়াতে পারে তা সুনিশ্চিত করা হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের পর বিজয়ী পাশ্চাত্য মিত্র শক্তি অধীনতামূলক ধরনের চুক্তি চাপিয়ে দিয়ে তুর্কি খেলাফতের অবসান ঘটায়। একই সাথে তুরস্কের মানচিত্রকে খণ্ডিত করে একবারে ছোট করে ফেলা হয়। পুরো তুর্কি ভূখণ্ডকে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার বিরুদ্ধে তুর্কি সেনারা প্রতিরোধ যুদ্ধ করে স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। তবে ১৯২৩ সালে সুজারল্যান্ডের লুজানে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে তুরস্কের বিকাশ ও সমৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টাকে শৃঙ্খলিত করে ফেলা হয়।

কী ছিল লুজান চুক্তিতে?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তকারী চূড়ান্ত চুক্তি হিসেবে পরিচিত ১৯২৩ সালের লুজান চুক্তিতে একদিকে অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি তুরস্কের প্রতিনিধিরা এবং অন্য দিকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, গ্রিস, রোমানিয়া এবং যুগোস্লাভিয়ার প্রতিনিধিরা ছিলেন। সাত মাসের সম্মেলনের পরে ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুজানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে তুরস্কের আধুনিক রাষ্ট্রের সীমানার স্বীকৃতি দেয়া হয়। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, তুরস্ক তার আগের আরব প্রদেশগুলোর ওপর কোনো দাবি জানাবে না এবং সাইপ্রাসে ব্রিটিশদের দখল এবং ডডেকানিজের ওপর ইতালীয় অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে। অন্য দিকে মিত্ররা তাদের তুরস্কের কুর্দিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি পরিত্যাগ করবে। সাথে সাথে তুরস্ক আর্মেনিয়ার স্বত্ব ত্যাগ করবে। আর তুরস্কের ওপর প্রভাব বিস্তার করার দাবি ত্যাগ করবে মিত্র শক্তি এবং তুরস্কের আর্থিক বা সশস্ত্র বাহিনীর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ চাপাবে না। এজিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরের মধ্যে বসফরাস প্রণালীতে জাহাজ চলাচলে কোনো ফি নিতে পারবে না তুরস্ক।

ওসমানী সাম্রাজ্যের পরিসমাপ্তি  :

ওসমানী সালতানাতের সব উত্তরাধিকাদেরকে নির্বাসিত করা হয়, কাউকে গুপ্ত হত্যা করা হয়, অনেককে নিখোঁজ করা হয়। তাদের সম্পদ বাজয়াপ্ত করা হয়। এই ভাবে খিলাফতের শেষ চিহ্ন পর্যন্ত মুছে ফেলা হয় তুরস্ক থেকে।

ওসমানী সাম্রাজ্যের বিভাজন এবং নতুন অনেক রাষ্ট্রের আবির্ভাব  :

১৫২১ খ্রিস্টাব্দে ওসমানী সালতানাতের আয়তন সর্বোচ্চ হয়, এ সময় তার আয়তন ছিল ৩৪ লক্ষ বর্গ কিমির বেশি। বিভিন্ন সময় কম বেশি হওয়া সাম্রাজ্যের গড় আয়তন ছিল ১৮ লক্ষ বর্গোকিমি। বর্তমান তুরস্কের আয়তন মাত্র ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার বর্গ কিমি। বিশ্বখ্যাত অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর এর থেকে অন্তত ৪০ টি নতুন রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়।

ইসলাম বিরোধী সেক্যুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা  :

কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্কে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপ আমেরিকার তাবেদার সেক্যুলার রাষ্ট্র। নিষিদ্ধ করা হয় আরবী চর্চা, বন্ধ করা হয় হাজারো মাদ্রাসা, মসজিদে মসজিদে আজান নিষিদ্ধ করা হয়, হত্যা করা হয় বহু ইমাম, মুয়াজ্জিন, ইসলামী স্কলার এবং আলেমকে। ওসমানী সালতানাতে মূলত দুটি ভাষা প্রচলিত ছিল একটি আরবী অপরটির ফারসি। সাম্রাজ্যের বর্ণমালাকে আবজাদ বলা হতো, যা ওসমানী সাম্রাজ্যের ভাষা বলে পরিচিত ছিল। তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষার পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রচলন করা হয় ল্যাটিন ভাষার। এই ভাবে রাতারাতি একটি জাতিকে ফেলে দেয়া হয় অক্ষরজ্ঞানহীন, পরিচয়হীন একটি অন্ধকার কুপে।

তুরস্কের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান এবং আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা  :

চুক্তির পরবর্তী একশো বছর তুরস্ক নিজেদের ভূমিতে বা বাইরে কোনো দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান এবং আহরণ করতে পারবে না। বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশের অর্থনীতি শুধুমাত্র তেলের ওপর নির্ভরশীল সেখানে তুরস্ককে তেল উত্তোলন করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখা হয় ফলে তুরস্ক নিজেদের প্রয়োজনে সব রকম জ্বালানি আমদানি করে বাইরের দেশ থেকে যা তাদের অর্থনৈতিক উন্নতিতে প্রধান অন্তরক।

বসফোরাস প্রণালীর আন্তর্জাতিকরণ  :

তুরস্কের অর্থনীতির ওপর আরো একটি বৃহৎ ধাক্কা দেয়া হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন সামুদ্রিক পথ বসফরাসের ওপর তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ শেষ করে দেয়ার মাধ্যমে। কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের মাঝে সংযোগস্থাপনকারি এই প্রণালীটি এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যেকার বাণিজ্যের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। প্রতিদিন তুরস্কের বুকের ওপর থেকে হাজারো জাহাজ পার হলেও তুরস্ক তাদের থেকে এক টাকাও সংগ্রহ করতে পারেনা।

মক্কা ও মদিনার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া  :

৪০০ বছর মক্কা এবং মদিনাকে নিয়ন্ত্রণ করা তুর্কি সুলতানরা নিজেদেরকে দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বলে অভিহিত করতে গর্ববোধ করতো। ওসমানী সাম্রাজ্য থেকে পৃথক হওয়ার পর ১৯৩২ সালে আমেরিকার তাবেদার সাউদ গোষ্ঠী সৌদি আরবের মসনদে বসার পর মক্কা ও মদিনার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তুরস্কের বাসিন্দারা আজও হজ এবং ওমরাহ করার সময় মক্কা মদিনায় কেঁদে কেঁদে দোআ করে যে, “ইয়া আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করো, আমাদের ওপর তোমার অসন্তুষ্টি শেষ করো, আমাদেরকে আবার মক্কা মদিনার খাদেমের মর্যাদা ফিরিয়ে দাও।”
তুর্কিরা হজের সময় নিজেদের সঙ্গে এক ধরনের মানচিত্র নিয়ে আসে যাতে মক্কা মদিনার পূর্বের সব পবিত্র স্থাপনার বর্ণনা আছে যার মধ্যে অনেক স্থাপনা সৌদি সরকার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। তারা নাম নিয়ে নিয়ে সেই সব জায়গায় সাহাবীদের কবর জিয়ারত করে।

এরপর কী হবে?
২০২৩ সালের মধ্যে লুসান চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই চুক্তির অবসানের পর তুরস্ক কী পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলবিদদের মধ্যে নানা আলোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তুরস্ক কি অটোমান সাম্রাজ্যকে পুনরুত্থিত করতে চাইবে? এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তন হবে? তুরস্ক কি তার শক্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে আঞ্চলিক আধিপত্য তৈরি করার মাধ্যমে নিজেকে আগের ভূমিকায় ফিরিয়ে আনবে? তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ২০২৩ সালের পরে বিপ্লবী কিছু ঘটতে চলেছে। তিনি উল্লেখ করেন, তুরস্ক ২০২৩ সালের লক্ষ্যে পৌঁছার পর পুরো অঞ্চলের ভবিষ্যৎকে নতুন অবয়ব দেবে। তুরস্ক এখন নতুন বিজয় ও সাফল্যের দোরগোড়ায়।

এরদোগান উল্লেখ করেন যে, ‘তুরস্কের বিরোধীরা’ ১৯২০ সালে ‘সেভের্স চুক্তি’ এবং ১৯২৩ সালে লুসান চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল। যার মাধ্যমে তুরস্ককে এজিয়ান সাগরের দ্বীপপুঞ্জ গ্রিসের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এরদোগান বলেন, সেভের্সের সন্ধির মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্যের পেছনে প্রথম ছুরিকাঘাত করে তুরস্ককে তার অধীনে থাকা বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তুরস্ককে সাইপ্রাস, লিবিয়া, মিসর, সুদান, ইরাক এবং সিরিয়ার উরফা, আদানা এবং গাজিয়ানটপ কেলস এবং মার্শ বাদে লেভান্টের বাকি অঞ্চলের ওপরে সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

১৯১৪ সালের নভেম্বরে অটোমান সাম্রাজ্যকে মিসর ও সুদানের ওপর রাজনৈতিক ও আর্থিক অধিকার ত্যাগ করতে হয়। এর পরের সেভের্স ও লুজান চুক্তিকে তুর্কিরা কখনোই ভুলে যায়নি। লুজান চুক্তির আগে, ১৯২০ সালে ‘সেভের্সের সন্ধি’ সমাপ্ত করা হয়েছিল, যার আওতায় অটোমান সাম্রাজ্যের বেশির ভাগ অ-তুর্কি রাষ্ট্রকে স্বাধীনতা দেয়া হয়। তবে তুর্কিরা এই চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে ১৯২২-১৯২৩ যুদ্ধের দুর্দান্ত জয় অর্জন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যায়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তুরস্কের প্রচেষ্টাগুলোতে এখন অধিক মনোযোগ দিতে শুরু করেছে, বিশেষত লুজান চুক্তির সমাপ্তির বিষয়ে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো চুক্তি ১০০ বছর পরে শেষ হয়ে যায়। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান ২০২৩ সালে এই চুক্তির মেয়াদের ওপর লক্ষ রাখছেন। উত্তরের ইরাকের মসুলের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সিরিয়ার রাক্কা ও আফরিনের সাথে তুরস্ককে সংযুক্ত করার ভাবনা তার মধ্যে রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। লুজান চুক্তির আগে এই এলাকা সবসময় তুরস্কের সাথে সংযুক্ত ছিল।

২০২৩ সালে ১০০ বছরের পুরনো চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তুরস্ক নিজেই জ্বালানি অনুন্ধানের জন্য ব্যাপকভাবে মনোনিবেশ করবে বলে মনে হচ্ছে। এরদোগান ইঙ্গিত দিয়েছেন, তেল সরবরাহকারী জাহাজগুলো কৃষ্ণসাগর এবং মারমার সাগরের মধ্যে পারাপারে তুরস্ক একটি নতুন চ্যানেল খনন করে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে। এখান থেকে আদায় করা ফি তুরস্কের অর্থনীতিতে নতুন সঞ্জিবনী যুক্ত করবে।

বিগত শতাব্দীতে, বিশেষত গত দশকে, তুরস্ক অঞ্চলটির মধ্যে কিছুটা প্রভাব বিস্তারকারী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আঞ্চলিকভাবে প্রভাবের ক্ষেত্রে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী এখন ইরান। আর ইসরাইল তার সামরিক শক্তির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। সিরিয়ার বিরোধে তুরস্ক সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। ‘অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড’ এবং তার ‘অপারেশন জলপাই শাখা’ এবং লিবিয়ায় জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিএনএ সরকারকে সামরিক সহযোগিতা প্রদানে বিশেষ ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে দেশটি আবারো একটি আঞ্চলিক শক্তি হয়ে উঠেছে, যাকে এই অঞ্চলের সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নেতা হিসেবে এক সময় গণ্য করা হতে পারে।

২০২৩ সালে কী করবে তুরস্ক?
২০২৩ সালের মধ্যে তুরস্কের অর্জনের জন্য অনেক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে অর্থনীতি, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্র রয়েছে।

অর্থনীতি: ২০২৩ সাল নাগাদ শীর্ষ দশ বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম হয়ে ওঠার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তুরস্কের। ২০১৪ সালের এক ট্রিলিয়ন ডলারের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে ২০২৩ সালের মধ্যে দুই ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২৫,০০০ ডলারে নিয়ে যাওয়া এবং ২০২৩ সালের মধ্যে তুরস্কের বার্ষিক রফতানি ৫০০ বিলিয়ন ডলারে বাড়ানোর লক্ষ রয়েছে। সেই সাথে ২০২৩ সালের মধ্যে বিদেশী বাণিজ্যের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ ঠিক করা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রায়।

এ ছাড়া ২০২৩ সালের মধ্যে কর্মসংস্থানের হার দশ পয়েন্ট বাড়িয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যা তিন কোটিতে উন্নীত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশে হ্রাস করা হবে। আর বসফরাস প্রণালী এবং ডারডানেলিসের মাধ্যমে সমুদ্র বাণিজ্যে শুল্ক প্রয়োগ করে বাড়তি আয়ের সংযোজন করা হবে। বায়ুভিত্তিক বিদ্যুতের ইনস্টল ক্ষমতা ২০,০০০ মেগাওয়াট এবং ভূ-তাপীয় শক্তির ইনস্টল ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। দক্ষতা উন্নতকরণের মাধ্যমে ২০১ স্তরের ২০ শতাংশের নিচে জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনা হবে। তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হবে এবং এই প্লান্টগুলোর ইনস্টলড ক্ষমতা ১৪,৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে।

পররাষ্ট্র নীতি: তুরস্কের বিদেশ-নীতির লক্ষ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, তুরস্ক ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার সব শর্ত অর্জন করবে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে ইইউর প্রভাবশালী একটি সদস্য দেশ হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক সংহতকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। তৃতীয়ত, এটি আঞ্চলিক সঙ্ঘাত নিরসনে কার্যকর ভূমিকা নিতে চাইবে। চতুর্থত, এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে সব ক্ষেত্রে জোরালোভাবে অংশ নেবে। পঞ্চমত, এটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে এবং বিশ্বের শীর্ষ দশ বৃহত্তম অর্থনীতির একটিতে পরিণত হবে। এসব লক্ষ্য অর্জনে তুরস্ককে অবশ্যই প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে হবে, বিশ্ব স্থিতিশীলতা সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে আগ্রহী হতে হবে এবং সে অনুযায়ী অবদান রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা: স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে তুরস্কের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থায় জনগণের ১০০ শতাংশ অংশগ্রহণ। প্রতি এক লাখ লোকের জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা বর্তমান ১৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২১০ জনে উন্নীতকরণ।

পরিবহন: বিবেচ্য সময়ের মধ্যে ১১ হাজার কিলোমিটার নতুন রেলপথ তৈরি করা হবে এবং উচ্চগতির ট্রেনের নেটওয়ার্ক প্রসারিত করা হবে। ১৫ হাজার কিলোমিটার বিভক্ত মহাসড়ক তৈরি করা হবে। বিশ্বের বৃহত্তম আকারের ১০টি বন্দর প্রতিষ্ঠা বা সম্প্রসারণ করা হবে। স্থানীয়ভাবে বিমান, মানুষ্যবিহীন ড্রোন এবং উপগ্রহ তৈরি করা হবে।

পর্যটন: তুরস্ককে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যেখানে পাঁচ কোটি পর্যটক আকৃষ্ট হবে এবং বছরে ৫০ বিলিয়ন আসবে পর্যটন খাত থেকে।

লক্ষের পথে কতটা এগিয়েছে তুরস্ক? 
আর তিন বছর পরই আসবে ২০২৩ সাল। এর মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ অর্জনের পথে তুরস্ক অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। প্রতিবেশী অঞ্চলে যুদ্ধবিগ্রহ, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এবং সর্বশেষ করোনা সংক্রমণের কারণে তুরস্কের অগ্রগতি বেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেশটি নিজস্ব লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
তুরস্কের এক সময় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার একটি ব্যাধি ছিল। গত দুই দশক ধরে সেই ব্যাধি থেকে দেশটি মুক্ত হয়েছে বলে মনে হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এ ধরনের প্রবণতা অনেকখানি কমে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। তুরস্ক দেশে এমন এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পেরেছে যেখানে প্রকৃতই জনসমর্থনের প্রতিফলন ঘটে। ক্ষমতাসীন একেপির অধীনে হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেশটির সবচেয়ে বড় তিন সিটির নির্বাচনে শাসক দল পরাজিত হয়েছে। দেশটির গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে নানা ধরনের সমলোচনা সত্ত্বেও সেখানে ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার এক ধরনের সমন্বয় ঘটেছে। অনেকে তুর্কি শাসনব্যবস্থাকে ইসলামী মূল্যবোধ ও ধ্যানধারণা আর পাশ্চাত্যের উদার গণতন্ত্রের একটি সমন্বিত মডেল হিসেবে বিবেচনা করেন। মধ্যপ্রাচ্যের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের এ অঞ্চলে তুরস্ককে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।

অনেক সমালোচক মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক উসমানীয় খেলাফতের পুরনো সাম্রাজ্যকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। এই অভিযোগ এনে মধ্যপ্রাচ্যে মিসর, সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমন্বয়ে একটি অক্ষও তৈরি করা হয়েছে; যার সাথে ইসরাইলের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র।
এ কথা সত্যি যে, লুজান চুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে তুরস্ককে সঙ্কুুচিত এক দেশে পরিণত করা হয়েছে। এমনকি মসুল ইদলিব আফরিন রাক্কার মতো তুর্কি ঐতিহ্যের শহরকে তুরস্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। লুজান চুক্তির অবসানের পর এসব এলাকাকে তুরস্ক তার মানচিত্রভুক্ত করতে পারে বলেও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন। এজিয়ান সাগরের তুর্কি দ্বীপ যেগুলো গ্রিসকে স্থানান্তর করা হয়েছে সেগুলো আবার তুরস্ক নিজ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে বলে মনে করা হয়। সাইপ্রাসের ব্যাপারে তুরস্ক আবার আগ্রাসী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও মনে করা হয়।

এসব জল্পনা অনেকখানি তুরস্ক এবং এর প্রভাবকে তার সম্পূর্ণ ভূখণ্ডে আটকে রাখতে করা হয় বলে মনে হয়। এরদোগান সব সময় একজন স্বপ্নচারী রাষ্ট্রনায়ক হলেও তাকে অবাস্তব উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তিনি এমন কোনো অপরিণামদর্শী নীতি বা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে মনে হয় না যাতে পুরো ইউরোপের সাথে তার শত্রুতা সৃষ্টি হয়। অথবা মধ্যপ্রাচ্যের জাতি রাষ্ট্রগুলোর মুখোমুখি হয়ে পড়েন তিনি। যদিও এরদোগান তার নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বেশ জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব এবং এই অঞ্চলের জনপ্রিয় আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন।

এরদোগানের পররাষ্ট্র কৌশল পর্যবেক্ষণে মনে হয় তিনি বিশ্ব শক্তিগুলোর সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে চলবেন। তিনি ন্যাটোর মধ্যে থেকেই রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে চলছেন। চীনের সাথেও তার রয়েছে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক। তুর্কি রাষ্ট্রের অখণ্ডতা অগ্রগতি এবং বিদ্যমান রূপকল্পকে সামনে রেখে এগোতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে তুরস্ক আবার পরিণত হতে পারে একটি অন্যতম বিশ্ব শক্তিতে। ২০২৩ সাল নিঃসন্দেহে এই ক্ষেত্রে একটি বিরাট মাইলফলক।

ShareTweet
MD FORHAD REZA

MD FORHAD REZA

Next Post
তোমাকে নিয়ে লিখছি প্রথম কবিতা

তোমাকে নিয়ে লিখছি প্রথম কবিতা

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Trending
  • Comments
  • Latest
Trip to Mohipur Bridge, Rangpur

Trip to Mohipur Bridge, Rangpur

November 25, 2024

যদি একটা বসন্তের কথা দাও

November 25, 2024

সোনার তরী

November 25, 2024
Trip To Mahasthangarh, Bogura

Trip To Mahasthangarh, Bogura

November 25, 2024

সোনার তরী

0

শেষ সন্ধ্যায় কেন এলে?

0
এমন কোন তরবারী দুনিয়ায় আছে যেটা সাইফুল্লাহর মোকাবেলা করতে পারে?

এমন কোন তরবারী দুনিয়ায় আছে যেটা সাইফুল্লাহর মোকাবেলা করতে পারে?

0

স্বাধীনতা তুমি কবে স্বাধীন হবে?

0

সোনার তরী

November 25, 2024

শেষ সন্ধ্যায় কেন এলে?

November 25, 2024
এমন কোন তরবারী দুনিয়ায় আছে যেটা সাইফুল্লাহর মোকাবেলা করতে পারে?

এমন কোন তরবারী দুনিয়ায় আছে যেটা সাইফুল্লাহর মোকাবেলা করতে পারে?

November 25, 2024

স্বাধীনতা তুমি কবে স্বাধীন হবে?

November 25, 2024

Md Forhad Reza, a Bangladeshi writer, invites you to explore a fusion of insightful blogs and academia. From everyday thoughts to deeper explorations, join the journey for simplified understanding and knowledge sharing.
Read more

Copyright © 2024 Md Forhad Reza. All rights Reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
No Result
View All Result
  • Home
  • Travel News
  • Destination
  • Travel Ideas
  • Food & Drink
  • Video

Copyright © 2024 Md Forhad Reza. All rights Reserved.